এইটা কী বলতে পারিস ?
কোনটা ?
তোর হাতে যেটা !
ধুর ! ঐ যে গাছের ডগায় ঝুলছে, ইঁদুরের মত ঐটা !
তিব্বত নাক কুচকে বললো,- ও, ওটা বামন চিকা ।
আমি জানি বামন চিকা নয় ওটা । ওটা গন্ধ চিকা । তিব্বত বানিয়ে বানিয়ে সুন্দর সব নাম বলে । আমার ভালো লাগে । আজ আমার মন খারাপ করেছিলো । বড্ড একা একা লাগছিলো । তাই তিব্বতকে মোবাইল করেছিলাম,- তিব্বত, যাবি চল জামালপুরে ঘুরে আসি ।
ময়মনসিংহ জামালপুর ? বিকট রকম দূর্গন্ধযুক্ত বিষাদময় যাত্রা । যদি পার্কে যেতে চাস তাহলে আসতে পারি !
পার্ক মানে , হাদিস পার্ক ?
আরে। খুলনা শহরে ওর থেকে ভালো ঘোরার জায়গা আছে নাকী ? বল আসবো ।
আমি অনিচ্ছা স্বত্তেও বললাম,- আয় !
আমি জামালপুর যেতাম না । এমনি বলেছিলাম । মা যেতে দিতেন না । কেনো দেবে, বাবা মরার পর মাতো আমাকে নিয়েই ভালো আছে, বুকে জড়িয়ে আছে । মার বন্ধু কমলকে আমি একটুও পছন্দ করি না। কিন্তু মার কাছে খুব হাসি হাসি নিয়ে বলি,-কমল কাকু , আসবে কখন , মা ?
মা আমার আগ্রহ দেখে তৃপ্তি পান । মেয়ে যে কমলকে মেনে নিয়েছে এটা জেনে মা নিশ্চিন্ত হন । মা জানেন না। আমার দুই চোখের বিষ কমল কাকু ।
মা অনেক কিছু বুঝতে পারেন না । আমি যে মাকেও ইদানিং সহ্য করতে পারি না । তাও না । রাত হলে গুটিশুটি মেরে মার বুকের ভেতর সরে ঘুমায় । মা ছোট্ট শিশুর মত গুনগু্ন করে গান গেয়ে আমায় ঘুম পাড়ায় । আমার ভীষণ রকম অসহ্য লাগে । মার শরীরের উত্তাপে আমি অসুচিতার গন্ধ পাই । কিন্তু ভাব করি আমার মা ছাড়া ঘুম আসবে না । মা এক সময় ঘুমিয়ে যায় । আমি সরে আসি । মাঝখানের ব্যবধান এক হাত । কিন্তু আমার মনে হয় মাঝখানে মহাসমুদ্র গর্জে উঠেছে, যেকোন মুহুর্তে কোথায় আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ।
বাবা মরে যাবার পর বিষয় সম্পত্তি যা ছিলো মা বুঝে বিক্রি করে নিয়ে এসেছেন । জামালপুরে যাবার আমাদের আর দরকার নেই । কিন্তু আমার অন্তর কেঁদে ওঠে । ওই মাটিতে আমার বাবা মানুষ হয়েছে । ঐ সবুজ গ্রামের ধুলোমাটিতে বাবার পদচিহ্ণ মিশে আছে । মা জানে আমি জামালপুর ভুলে গেছি । ভুলে গেছি আমার বাবার হাসি মাখা আদর জড়ানো হাসি । কিচ্ছু ভুলিনি ।
তিব্বত ধাক্কা দিলো -এই প্রিতি কী ভাবছিস ?
চিকাটা কীভাবে পাড়া যায় তাই ভাবছিলাম ।
ওটা চিকা নারে। গেছো ইঁদুর !
সন্ধ্যার পর এখন পার্কে খুব লোক হয় । আমি তিব্বতকে নিয়ে প্রায় আসি । মা বাঁধা দেন না । কারণ তিব্বত মার ফুফাতো বোনের ছেলে ।
আচ্ছা তিব্বত, তোর নাম তিব্বত কে রেখেছিলো ?
তিব্বত নির্লিপ্তভাবে উত্তর দেয় ,-সমুদ্রকাকা ।
সমুদ্রকাকাটা আবার কে ?
বিশাল কাকুর ছোট ভাই ।
বিশাল কাকুকে ?
অসীমদার চাচা ।
গেঁছো ইঁদুরটা ধরে দিবি !
ওর চেয়ে চাঁদ চা ।
তিব্বত চাঁদ কেনো এখন দুই টাকার বাদামও কিনে দিতে পারবে না । কারণ আমি দেখেছি, বেঞ্চির পেছনে যে ছেলেটি ঘাসের উপর বসেছিলো সে তিব্বতের পকেটের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলো । পড়েই ব্যথা পাবার অভিনয় করতে করতে চলে গেছে । আমি কিছু বলার আগেই ছেলেটা শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হওয়া একদল যুবকের মাঝে হারিয়ে গেলো ।
বিশালের পকেটটা বিশ্রীভাবে উল্টানো । বললাম,-বাদাম খাওয়া ।
তিব্বত ঠোঁট উল্টে বললো,-টাকা নায়, সাত ষট্টি টাকা ছিলো, বামন চিকাটা মানি ব্যাগসহ ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেছে । যখন বুঝতে পারলাম দৌঁড়ে যেয়ে ধরতে পারতাম না । দেখিস না লোকে লোকারণ্য,
এতলোক কোথা থেকে এলো ?
এই জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞাপণ দেখেছিস কোথাও এখন ?
আমি তিব্বতের নির্লিপ্ততা দেখে অবাক হই । কত সহজে বাজে ব্যাপারগুলোও বলে ফেলে । যেনো এগুলো শিশুরাও বোঝে ।
তিব্বত তোর মানি ব্যগের জন্য কষ্ট হচ্ছে ?
তিব্বত হাসলো। হো হো করে । কোথা থেকে যে এত হাসি ও জোগাড় করে ।
তারপর বললো,- নে, চল তোর ব্যাগে টাকা আছে ?
কেনো ?
রিক্সা ভাড়া ।গ্যাঞ্জাম ভালো লাগছে না, ফাঁকায় যেয়ে তোর ঠোঁটে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু এখানে হবে না । কিস খাওয়ার অপরাধে জেল হতে পারে । রিক্সায় যেয়ে খাবো ।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম । আমি জানি ও রিক্সায় যেয়েও এমন ভদ্রভাবে বসবে যাতে আমার শরীরের উত্তাপ ওর গায়ে না লাগে ।
সোজা এসে রিক্সা নিলো । বললাম,-হুট তুলে দে ।
তিব্বত অবাক হয়ে বললো,- কেনো ?
চুমু খাবি না ?
তিব্বত আবার হো হো করে হেসে উঠলো । তারপর সযত্নে দূরে সরে বসলো ।
মা আজ নীল হলুদ রঙের একটা শাড়ী পরেছে । খুবই বিশ্রী লাগছে ।
সাথে ম্যাচ করে নীল রঙের একটা শাল গায়ে জড়িয়েছেন । শাল জড়াবার মত শীত পড়েনি এখনও । আজ বোধ হয় কমল কাকু আসবেন ,
ঘৃণায় বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো । মার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম,- মা, তোমাকে আজ নিহারিকার মত লাগছে ।
সে কে ?
ভারতের বিখ্যাত নায়িকা ।
আমি জানি না, নিহারিকা নামে কোনো নায়িকা আছে কীনা ।
মা বললেন,- সুচিত্রা সেনই তো বিখ্যাত ।
তাই নাকী, তাহলে মা উনি মালেশিয়ার নায়িকা ।
মা একটুখানি অবিশ্বাস নিয়ে বললেন,- আমি চিনি না, হতে পারে !
কমল কাকু রাতের দিকে এলেন । আমি খেজুর মিষ্টি ভালোবাসি । আইসক্রীম ভালোবাসি । কমল কাকুর সব মুখস্থ । আমার জন্ম তারিখও তার মনে থাকে । কমল কাকুর এই সব মুখস্থ ব্যপার স্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই । কিন্তু অবাক হবার ভান করে বলি,- কাকু! হাউ নাইস ! আপনি আমার জন্মদিনটাও মনে রেখেছেন ? কাকু লাভ ইউ । ভেরি মাচ ।
মা খুশি হন । উজ্জ্বল হয়ে ওঠে চোখ মুখ । আর আমি তখন ভেতরে ভেতরে জ্বলছি । বুকের উপর গরাণ কাঠের আগুন রেখে জ্বলছি । এরা কেউ বোঝে না । ওরা বোঝে আমার বিদেশী গাউন, সোনার নেকলেস, প্রিয় হ্যান্ডব্যাগ, রজনী গন্ধ্যার স্টিক ।
কমল কাকুর সাথে মা বেডরূমে চলে গেলো । আমার হাতে ধরা আইসক্রীমের প্যাক আর খেজুর মিষ্টি, সেই নিউ মার্কেটের সামনে থেকে এনেছেন ।
তিব্বতকে বড় মনে পড়ে । ওর ঠোঁটে আমার চুমু খেতে ইচ্ছে করে । ওর বুকের সাথে লেপ্টে যেতে ইচ্ছে করে । কিন্তু তিব্বত এখন তার বাড়িতে, হয়তো পুরনো দিনের সুচিত্রা সেন মার্কা গান শুনছে । না হয় খোলা ছাঁদ গিয়ে কালপুরুষ আবিস্কারের নেশায় মেতে আছে ।
ছাদে গেলাম । আইস্ক্রীমের প্যাকেটটা ধরে পেছনের বাগানে ছুড়ে দিলাম । পিঁপড়াদের অনেকদিন খেতে দেওয়া হয়নি । একটা একতা খেজুর মিষ্টি উঠাচ্ছি । মিষ্টির আঠা আমার ভীষণ অপছন্দের । এখন জোর করে ওটাকে পছন্দের বানাচ্ছি । আঠা মুখে হাতে লেপ্টে নিলাম । আকাশে চাঁদ ঝলমল করছে । তিব্বতকে ফোন দিলাম ।
হ্যালো, তিব্বত !
আমি নিশি বলছি ,
নিশি ?
তিব্বতের হাসি শোনা যাচ্ছে । প্রশ্ন করছে,- হায় সোনা, কে ফোন করেছে ?
জানি না, দেখো ।
আমি ফোনটা অফ করে দিলাম । কী যেন একটা উড়ে এসে আমার চুলের উপর পড়লো !
চোখ বুঝলাম ,- হয়তো, চিকায় হবে , গন্ধ চিকা হলে দুর্গন্ধ বের হতো, এটা নিশ্চয় বামন চিকা ।ব্যথাতুর যন্ত্রনার সুগন্ধ পাচ্ছি ।।
০৬ জুন - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
১৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪